আজ বুধবার, ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঈদে ৬ হাজার পরিবারে টিম খোরশেদের খাদ্য উপহার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

করোনার সংকট কালে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ডসহ মহানগরীর বিভিন্ন মহল্লায় দল-মত,জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ৬ হাজার পরিবারের প্রত্যেক ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে টিম খোরশেদ-১৩ এর ত্রাণ বিতরণ টিম।

সামর্থবান ব্যক্তি ও সংগঠনের সহযোগিতায় প্রতি ব্যাগে থাকছে চাল, ডাল, তেল, সেমাই, বুট, চিনি ও লবণ। টিম খোরশেদ-১৩ এ প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার নাসিক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন সরকারী ত্রাণ, ওএমএস ও মানবিক সহায়তা ছাড়াও আমি সামর্থবান ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় সংকটকালে এলাকাবাসীর পাশে দাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই অয়োজন করেছি। আশা করছি জনগণ এতে উপকৃত হবে।

তিনি বলেন টিম খোরশেদের ত্রাণ টিম সারা দিন ও রাতে সেহরী পর্যন্ত ঘরে ঘরে গিয়ে ঈদ সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে। আমরা সহায়তা করার ক্ষেত্রে দল-মত, জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই ওয়ার্ডে বসবাসরত অন্যান্য জেলার মানুষকেও আমরা সকল প্রকার সুবিধা পৌছে দিচ্ছি, সাধারণত যা করা হয় না। আমরা মনে করি আইডি কার্ড দেখে নয়, সহায়তা করা উচিত ব্যক্তির অবস্থার উপর নির্ভর করে। আমরা বিশ্বাস করি কারো যদি সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে তাকে সাহায্য করতে হবে মানবিক কারণে মানুষ হিসেবে, ভোটার হিসেবে নয়।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রথম করোনার প্রকোপ দেখা দেয়া মাত্র ৯ ই মার্চ থেকে নাসিক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ  Team Khorshed 13 vs Covid 19″  নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরী করে কাজ শুরু করেন। সংগঠনটি প্রত্যেক্ষ কার্যক্রমের দুই মাস ও করোনা সাসপেক্ট ও পজিটিভ মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করার ১ মাস পূর্ণ হয়েছে আজ ০৮ ই এপ্রিল। গত ২ মাসে টিম খোরশেদ নিন্ম লিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

বাংলাদেশে প্রথম বারের মত গত ০৮ই মার্চ নারায়নগঞ্জে দুইজন করোনা পজিটিভ সনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যেক্ষ ভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ০৯ ই মার্চ ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক মহানগরীতে বিতরণ শুরু করে ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। টিম লিডার খোরশেদ জুম্মার নামাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বক্তব্য রাখে।

★স্যানিটাইজার ও লিকুইড সোপ তৈরী ও বিতরণ:

সচেতনামূলক কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু ঘটে। ফলে সারাদেশের মত নারায়নগঞ্জেও করোনা ভীতি ছড়িয়ে পরলে বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় একদিনেই সংকট সৃষ্টি হওয়ায় টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে। ২৮ শে মার্চ ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস সোপ তৈরী ও বিতরণ করে।এসময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মূলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে ৩ লক্ষ স্যানিটাইজার রৈী করে বিতরণ করে।

★করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন ও সৎকার ঃ

করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে মৃতদেহের দাফন ও সৎকার নিয়ে অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আত্মীয় স্বজন,বন্দু,প্রতিবেশীরা, এমনকি পরিবারের লোকজনও যখন মৃতদেহ সৎকার ও দাফনে অনীহা জানাতে শুরু করে তখন ৩০ শে মার্চ Team Khorshed 13 vs Covid 19″ নারায়নগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে তারা করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ গোসল, জানাযা,দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।

০৭ ই এপ্রিল টিম খোরশেদ নারায়নগঞ্জে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন জানান। ০৮ ই এপ্রিল প্রথম করোনা সাসপেক্ট আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত ৪৮ জনকে দাফন ও সৎকার করেন। এর মধ্যে ১৬ জন কভিড গজিটিভ,২১ জন সাসপেক্ট ও ৭ জন ছিল স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুবরণকারী মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করে।

★টেলি মেডিসিন সেবা :

১৪ মে টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর যৌথ উদ্যোগে করোনার শুরুতে চালু হওয়া ”টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন” সেবার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ৫ জন মানবিক চিকিৎসক কে নিয়ে শুরু হওয়া টিমের এখন সদস্য সংখ্যা এখন ১০ জন। গত ৩০ দিন মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে প্রায় ৬৫১৯ জন কে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।

মানবিক চিকিৎসকগণ হটলাইনের কল ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা ফ্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ২১৫ থেকে ২৫০ জন তাদের সেবা গ্রহন করে থাকে। ১৩ই মে পর্যন্ত ৩০ দিনে ৬৫১৯ জনকে সেবা দিয়েছে টিম খোরশেদের মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ। নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলার বাইরে থেকেও অনেক ফোন আসে ও সেবা দান করা হয়। টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ জানায় আপাতত জুন মাসের শেষ পর্যন্ত টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রয়োজন হলে সময় সীমা বৃদ্ধি করা হবে।টেলি মেডিসিন সেবায় বিনা পারশ্রমিকে স্বেচ্ছা শ্রম দিচ্ছেন মানবিক চিকিৎসক ডা,ফারজানা ইয়াসমি ¯িœগ্ধা,ডা,পঞ্চমী গোস্বমী,ডা.ফরহাদ জেনিথ,ডা.আরিফুল আলম,ডা.খাদিজা রহমান,ডা.তাসকিয়া আজিজ,ডা.মাহফুজ,ডা.গাজী মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ। এক মাস পূর্তি উপলক্ষে নতুন যোগ দিয়েছেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগের প্রধান ও দেশের উদিয়মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খালেদ মোহাম্মদ ইকবাল ও ডেন্টাল সার্জন ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌসী।

হটলাইন ম্যানেজমেন্ট ও সমন্বয়ের দায়িত্বে আশরাফুজ্জামান হিরা, ডক্টরস টিম লিডার ডা.ফরহাদ জেনিথ,সহ- সমন্বয়কারী আরাফাত নয়ন খান বাবু।

টিম খোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভ এর এডমিন প্যানেলের সদস্য কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর মুখপাত্র আহমেদ জিদান বলেন,আমরা আমাদের মানবিক চিকিৎসকদের প্রতি নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও স্যালুট জানাই।তাদের নিরলস চেষ্ঠায় কয়েক হাজার মানুষ,বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা ও বয়স্ক মানুষ –ডায়েবেটিকস সহ অন্যান্য রোগে সেবা পেয়েছে।করোনা ভীতি দূর করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন টিমের ভ’মিকা প্রশংসীয়।

★বিনামূল্যে সবজী বিতরণ :

বিভিন্ন জেলা থেকে কম মূল্যে সবজী কিনে এনে মহানগরবাসীর মধ্যে ১০বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।১০ই মে থেকে শুরু ১৯ মে পর্যন্ত ৮০০০ গরিবারের মধ্যে ১০৫ মন সবজী বিরন করা হয়েছে।★ ভর্তূকী মূল্যে ঈদ সামগ্রী বিক্রি ঃ

মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক অবস্থান রক্ষা করে সহযোগিতা ও তাদের জীবন যাত্রার মান ধরে রাখার জন্য টিম খোরশেদ-১৩ ও টাইম টু গিভ যৌথ উদ্যেগে পরীক্ষামূলক ভাবে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি চালুৃ করেছে। ১৫ ই মে অর্থাৎ ২১ শে রমজান থেকে শুরু করে ২৮ শে রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী ভতুর্কি মূল্যে বিক্রয় করা হবে।১৭০০ প্যাকেটে ৩ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন দুটি। ভতুর্কির অর্থ সংগঠনের সদস্যরা বহন করবে।

বাজার মূল্যের ৬৪১ টাকার পণ্য ৪৬০ টাকায় প্রদান করা হবে। প্রতিটি গ্রাহক ১৮১ টাকা ভর্তুকি পাবেন। প্যাকেজে ২ কেজি পোলাও চাল, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার তীর সয়াবিন তেল, ২০০ গ্রাম ফ্রেস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার, ১০ টি ডিম, ১ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ২ প্যাকেট কুলসুন টিকন সেমাই থাকবে।

আগ্রহী গ্রাহকরা হট লাইন ০১৭৮০-৩৪৪৮৪২ নম্বরে ফোন করে অর্ডার করলে পরবর্তী ২৪ বা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হোম ডেলিভারী দেওয়া হবে। গ্রাহক তার খাদ্য সমাগ্রীর প্যাকেট হাতে পেয়ে ডেলিভারীম্যান কে ৪৬০ টাকা প্রদান করবে। তবে প্রাথমিক ভাবে এ সুযোগ শুধুমাত্র ১৩ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারীরা পাবেন। ঈদের পরেও যদি করোনা বা খাদ্য সংকট অব্যাহত থাকে তবে আশেপাশের অন্যান্য এলাকার জন্যও এই প্যাকেজ চালু করা হবে।

টিম খোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভের এডমিন প্যানেল সদস্য ও নাসিক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও টাইম টু গিভের মূখপাত্র আহমেদ জিদান ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় প্রকল্প সম্পর্কে জানান আমরা করোনার শুরু থেকেই যৌথ উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি স্যানিটাইজার তৈরী ও বিতরণ, টেলি মেডিসিন সেবা, করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন ও সৎকার এবং দুঃস্থ মানুষের মাঝে সবজি ও খাদ্য সমাগ্রী বিতরণ করছি। দুঃস্থ মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত কে তাদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে সহায়তা প্রদানের জন্য নগদ টাকায় বাজার থেকে উন্নত মানের মালামাল ক্রয় করে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিক্রয় প্রকল্প টি পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করেছি। ২৮ শে রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ প্যাকেটে আমরা ৩ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভতুর্কির অর্থ আমাদের সদস্যরা বহন করবে।